Sylhet Somachar's video:

- sylhet somachar is providing information and news of Sylhet and national. বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের উপহার দেয়া ৫০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড নামের করোনা ভ্যাকসিন ২১ জানুয়ারি ঢাকায় এসে পৌঁছায়। ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে এক ডোজ ভ্যাকসিন দেয়ার মাধ্যমে, বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়ার কর্মসূচি শুরু করেছে সরকার। ভারত থেকে এ ভ্যাকসিন আসার পর একটি মহল ভ্যাকসিন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা তথ্য প্রচার করে যাচ্ছে, যা অবৈজ্ঞানিক এবং ভিত্তিহীন। কীভাবে তৈরি হলো সিরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন। ভারতে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে দুই ধরণের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে উদ্ভাবিত অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন- ভারতে স্থানীয়ভাবে যার নাম দেয়া হয়েছে 'কোভিশিল্ড'। আর দ্বিতীয়টি হলো কোভ্যাক্সিন- যা ভারত-বায়োটেক নামে একটি স্থানীয় ফার্মসিউটিক্যাল কোম্পানির তৈরি। ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এই দুটি ভ্যাকসিনকেই সবুজ সংকেত দিয়েছে। ভারতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করছে সিরাম ইনস্টিটিউট। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এটি। সিরাম ইনস্টিটিউট কী ধরনের কাজ করে আসুন জেনে নেই ১৯৬৬ সালে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পুনেতে প্রতিষ্ঠিত হয় সিরাম ইনস্টিটিউট। করোনার এই সময়ে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের কোটি কোটি ডোজ তৈরি হচ্ছে এই সিরাম ইনস্টিটিউটে। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা এএফপি সিরামের ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বী ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিনের চেয়ে সিরামর কোভিশিল্ডের সংরক্ষণ এবং পরিবহনব্যবস্থার মান উন্নত। এটি ফাইজার বা মার্কিন সংস্থা মর্ডেনার তৈরি ভ্যাকসিনগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে সাশ্রয়ী, যা দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে সরবরাহ করা সহজ হবে। করোনা মহামারির আগ থেকেই ভারতীয় এই সংস্থা ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে বিশ্বে অন্যতম সেরা অবস্থানে রয়েছে। গড়ে প্রতিবছর ১৫০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদন করে এই প্রতিষ্ঠান। কোভিড ছাড়াও পোলিও, ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, হেপাটাইটিস বি, হাম ও রুবেলার ভ্যাকসিনও উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি, যা ১৭০টি দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সরকার কেন সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন নিয়েছে? বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করার জন্যে বিশালাকৃতির ‘কোল্ড চেইন’ নেটওয়ার্ক প্রয়োজন। ‘কোল্ড চেইন’ হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে সঠিক তাপমাত্রায় এই জীবনরক্ষাকারী ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক উৎপাদন থেকে শুরু করে মানবদেহে প্রয়োগ পর্যন্ত ভ্যাকসিনকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে গেলে বেশকিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। বিভিন্ন ভ্যাকসিনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রার প্রয়োজন। সেগুলোর জন্য প্রয়োজন ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়া। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরিকৃত কোভিশিল্ডের জন্য প্রয়োজন মাইনাস ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। কিন্তু, নিউইয়র্ক-ভিত্তিক ফাইজারের ভ্যাকসিনের জন্য প্রয়োজন মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। একবার খোলার পর তা দুই দিন ফ্রিজে রাখা যাবে। বায়োটেক প্রতিষ্ঠান মডের্নার ভ্যাকসিনের জন্য প্রয়োজন মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। প্রতিষ্ঠানটি এই তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এটি একবার খোলার পর এক সপ্তাহ ফ্রিজে রাখা যাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফাইজার ও মডের্নার ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করার সক্ষমতা নেই, এজন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে বাংলাদেশসহ মালদ্বীপ, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার, সেশেলস, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, মরিশাস এবং ব্রাজিল এ ভ্যাকসিন আমদানি করছে। বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করার সক্ষমতা রয়েছে। সিরামের ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ? মানবদেহে প্রয়োগের জন্য করোনার ভ্যাকসিন হিসেবে এখন পর্যন্ত তিনটি ভ্যাকসিন এগিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে ফাইজারের ভ্যাকসিন, বায়োটেক প্রতিষ্ঠান মডের্নার ভ্যাকসিন এবং সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন। এই তিনটি ভ্যাকসিনই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মানবদেহে প্রয়োগের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে তার জন্য সব ধরনের গবেষণা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক গবেষণার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে চিকিৎসকরা বলেছেন- সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরিকৃত ভ্যাকসিন ৯০ শতাংশ পর্যন্ত নিরাপদ। ভ্যাকসিন নিলে যে ধরনের সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে * টিকার স্থানে ব্যথা, ফোলা বা লাল হওয়া * মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা * শীতল অনুভূতি * ক্লান্ত বোধ করা * জ্বর এবং * বমিভাব চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো ভ্যাকসিনের সঙ্গে শরীরের মানিয়ে নেওয়ার একটি প্রক্রিয়া। এত কিছু জানার পর এখন আপনিই বুঝতে পারবেন কোনটি গুজব এবং কোনটি সত্য। সুতরাং আত্মবিশ্বাসই পারে ভয়কে জয় করতে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন চিকিৎসক, সাংবাদিক এবং পুলিশ সদস্যরা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬৪ জেলায় বিনামূল্যে টিকাদান শুরু হবে। দেশের মানুষকে টিকা পেতে অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারাও টিকাদানকেন্দ্রে যোগাযোগ করে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন। করোনার টিকা নিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিবন্ধন করতে হবে ‘সুরক্ষা’ নামক ওয়েব পোর্টালে (www.surokkha.gov.bd)। অ্যান্ড্রয়েড বা অ্যাপল প্লে স্টোর থেকে সুরক্ষা মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করেও করা যাবে নিবন্ধন।